পরাবৃত্ত

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - উচ্চতর গণিত - উচ্চতর গণিত – ২য় পত্র | | NCTB BOOK
2

পরাবৃত্ত (Ellipse) হলো কনিকের একটি বিশেষ ধরনের আকার, যা দুটি ফোকাল পয়েন্টের মধ্যে এমন একটি নির্দিষ্ট সম্পর্ক তৈরি করে যে, এর যেকোনো বিন্দুর জন্য দুই ফোকাল পয়েন্টের মধ্যে দূরত্বের যোগফল সবসময় একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে থাকে। পরাবৃত্তের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য ও গাণিতিক ব্যাখ্যা এখানে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।

পরাবৃত্তের গঠন

একটি পরাবৃত্ত দুটি প্রধান অক্ষ দ্বারা গঠিত:

  1. প্রধান অক্ষ (Major Axis): এটি পরাবৃত্তের দীর্ঘতম রেখা। এটি পরাবৃত্তের কেন্দ্রে দিয়ে যায় এবং দুটি শেষ বিন্দু (ফোকাস) থাকে এর উপর।
  2. সাহায্যকারী অক্ষ (Minor Axis): এটি পরাবৃত্তের সবচেয়ে ছোট রেখা, প্রধান অক্ষের perpendicular এবং এটি পরাবৃত্তের কেন্দ্রে দিয়ে যায়।

পরাবৃত্তের সমীকরণ

পরাবৃত্তের সমীকরণটি দুটি অক্ষের দৈর্ঘ্য ও কেন্দ্রে দুটি ফোকাল পয়েন্টের অবস্থান বিবেচনায় নিয়ে লেখা হয়। একটি সাধারণ পরাবৃত্তের সমীকরণ হলো:

\[
\frac{x^2}{a^2} + \frac{y^2}{b^2} = 1
\]

এখানে:

  • \(a\) হলো প্রধান অক্ষের অর্ধদৈর্ঘ্য।
  • \(b\) হলো সাহায্যকারী অক্ষের অর্ধদৈর্ঘ্য।
  • \(x\) এবং \(y\) হলো পরাবৃত্তের একটি পয়েন্টের স্থানাঙ্ক।

যদি \(a > b\), তাহলে পরাবৃত্তটি অনুভূমিকভাবে বিস্তৃত থাকে, এবং যদি \(b > a\), তাহলে এটি উল্লম্বভাবে বিস্তৃত থাকে।

পরাবৃত্তের বৈশিষ্ট্য

  1. ফোকাস (Foci): পরাবৃত্তের দুটি ফোকাল পয়েন্ট থাকে, যেগুলি প্রধান অক্ষের উপর অবস্থিত। পরাবৃত্তের সব পয়েন্টের জন্য, দুই ফোকাল পয়েন্টের মধ্যে দূরত্বের যোগফল সবসময় সমান।
  2. পেরিমিটার (Perimeter): পরাবৃত্তের পেরিমিটার বা পরিধি গণনা করা খুবই জটিল, কারণ এটি সোজাসুজি সমীকরণের মাধ্যমে নির্ধারণ করা যায় না। তবে, এটি আনুমানিকভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব।
  3. কেন্দ্র (Center): পরাবৃত্তের কেন্দ্র দুটি অক্ষের ছেদবিন্দুতে অবস্থিত।
  4. অক্ষের সম্পর্ক: পরাবৃত্তের প্রধান অক্ষ \(a\) এবং সাহায্যকারী অক্ষ \(b\) এর মধ্যে একটি সম্পর্ক রয়েছে। এটি ফোকাল দৈর্ঘ্য \(c\) এর সাথে সম্পর্কিত, যেখানে:

\[
c = \sqrt{a^2 - b^2}
\]

এখানে \(c\) হলো ফোকাল পয়েন্টের কেন্দ্র থেকে পরাবৃত্তের কেন্দ্র পর্যন্ত দূরত্ব।

পরাবৃত্তের ব্যবহার

পরাবৃত্তের বিভিন্ন বাস্তব জীবনের প্রয়োগ রয়েছে:

  • বৈজ্ঞানিক গবেষণা: গ্রহের কক্ষপথ ও বিভিন্ন মহাজাগতিক বস্তুর গতিবিধি পরাবৃত্তীয় হয়। সূর্য এবং অন্যান্য তারা পরাবৃত্তে ঘুরে।
  • অভিযান ও মহাকাশ: মহাকাশ অভিযানে যানবাহনগুলি পরাবৃত্ত কক্ষপথে চলতে পারে।
  • অভ্যন্তরীণ প্রকৌশল: কিছু যন্ত্রাংশ এবং ডিজাইনে পরাবৃত্তীয় আকার ব্যবহার করা হয়, যেমন উপকরণে নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য তৈরি করতে।

এইভাবে পরাবৃত্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ গাণিতিক ধারণা এবং বাস্তব জীবনে এর বহুল ব্যবহার রয়েছে।

Promotion